যৌগিক পদার্থের অণুর সংকেত লেখার নিয়ম:
যোজ্যতার ধারণা (Concept of Valancy):
যৌগিক পদার্থের অণুর সংকেত লিখতে গেলে প্রথমে যোজ্যতার ধারণা একটু নেওয়া প্রয়োজন। আমরা এর পূর্বে প্রথম \(20\) পারমাণবিক সংখ্যা পর্যন্ত মৌলের যোজ্যতা কীভাবে নির্ণয় করতে হয় দেখেছি। এখানে যোজ্যতা কথাটির অর্থ হল যোজন ক্ষমতা। অর্থাৎ একটি মৌল অপর একটি মৌলের সাথে যুক্ত হওয়ার ক্ষমতাকেই যোজ্যতা বলে। একটা উদাহরণ দিলেই আমরা বুঝতে পারবো।
যেমন, হাইড্রোজেন পরমাণু \(\left( H \right)\) একটি ইলেকট্রন বর্জন করে \({H^ + }\) ক্যাটায়নে পরিণত হয়। অপরদিকে একটি ক্লোরিন পরমাণু \(\left( {Cl} \right)\) একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে \(C{l^ - }\) ঋনাত্বক আয়নে পরিণত হয়। এখানে হাইড্রোজেন পরমাণুটি যে ইলেকট্রন বর্জন করে, ক্লোরিন পরমাণুটি সেই ইলেকট্রনটিকে গ্রহণ করে যথাক্রমে \({H^ + }\) ও \(C{l^ - }\) আয়নে পরিণত হয়ে তারা তড়িৎ আকর্ষণে পরষ্পর যুক্ত হয়ে \(HCl\) অণু গঠন করে। তাই এখানে হাইড্রোজেন ও ক্লোরিন পরমাণুর উভয়েরই যোজ্যতা হল \(1\)।
আবার একটি ক্যালশিয়াম পরমাণু \(\left( {Ca} \right)\) দুটি ইলেকট্রন বর্জন করে \(C{a^{ + + }}\) আয়নে পরিণত হয়। অপরদিকে একটি ক্লোরিন পরমাণু \(\left( {Cl} \right)\) কেবলমাত্র একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারে এবং \(C{l^ - }\) আয়নে পরিণত হয়। তাহলে এখন যদি ক্যালশিয়াম ও ক্লোরিন মিলে যৌগ গঠন করতে চায় তাহলে ক্যালশিয়াম পরমাণু দুটি ইলেকট্রন বর্জন করবে কিন্তু ক্লোরিন কেবলমাত্র একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারে, তাই এক্ষেত্রে দুইটি ক্লোরিন পরমাণুর দরকার হয়। এবং ওই যৌগিক পদার্থটির সংকেতে একটি ক্যালশিয়াম পরমাণু থাকে এবং দুটি ক্লোরিন পরমাণু থাকে, তাই এই যৌগটিকে লিখতে হয় \(CaC{l_2}\)। তাই এখানে ক্যালশিয়াম পরমাণুর যোজ্যতা হল \(2\) এবং ক্লোরিন পরমাণুর যোজ্যতা হয় \(1\)।
আবার কয়েকটি মৌল আছে যাদের যোজ্যতা একাধিক। এদেরকে পরিবর্তনশীল যোজ্যতা যোজ্যতা (Variable Valancy) বিশিষ্ট মৌল বলে। যেমন, ফেরাম বা লোহা, স্ট্যানাম বা টিন, কিউপ্রাম বা কপার, মার্কারী বা পারদ ইত্যাদি। নিম্নে একটি তালিকার মাধ্যমে এদের যোজ্যতাগুলি দেখানো হল। যৌগ গঠনের সময় যখন কম যোজ্যতার মৌলটি ব্যবহৃত হয় তখন তাদের নামের শেষে "আস" এবং যখন বেশী যোজ্যতার মৌলটি যখন লেখা হয তখন নামের শেষে "ইক" কথাটি লেখা হয়।
মূলকের ধারণা (Concept of Radicals):
কখনো কখনো একই মৌলের এক বা একাধিক পরমাণু বা বিভিন্ন মৌলের এক বা একাধিক পরমাণু জোটবদ্ধ অবস্থায় থেকে তড়িৎগ্রস্থ পরমাণু সমষ্টি বা আয়নের মতো আচরণ করে। তখন এদের সাধারণভাবে মূলক (Radicals) বলে। এই মূলকের আধান ধনাত্বক এবং ঋনাত্বক উভয়ই হতে পারে। এবং মূলকগুলির আধানের পরিমাণের দ্বারাই তার যোজ্যতা নির্ধারিত হয়।
যেমন, সালফেট মূলক \(SO_4^ = \), এর যোজ্যতা হল \(2\)
নাইট্রেট মূলক \(NO_3^ - \), এর যোজ্যতা হল \(2\)
কার্বনেট মূলক \(CO_3^ = \), এর যোজ্যতা হল \(2\) ইত্যাদি।
কয়েকটি সংজ্ঞা:
যোজ্যতা (Valancy):
কোনো মৌলের একটি পরমাণু, অপর কোনও এক বা ভিন্ন মৌলের কোনো পরমাণুর সাথে যুক্ত হওয়ার ক্ষমতাকে যোজ্যতা (Valancy) বলে।
সাধারণভাবে, কোনও মৌলের একটি পরমাণু যে কয়টি হাইড্রোজেন পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে বা হাইড্রোজেনঘটিত কোনও যৌগের অণু থেকে যতগুলি হাইড্রোজেন পরমাণু প্রতিস্থাপিত করতে পারে, সেই সংখ্যা দ্বারা ওই পরমাণুর যোজ্যতার পরিমাপ করা হয়। কারণ এক্ষেত্রে হাইড্রোজেনের যোজ্যতা হয় ।
মৌলমূলক (Radicals):
এক বা একাধিক একইরকমের পরমাণু অনেকসময় যৌগমূলকের ন্যায় আচরণ করে, তখন এদেরকে মৌলমূলক বলে।
যেমন:
ক্লোরাইড মূলক \(C{l^ - }\), এর যোজ্যতা হল \(1\)
নাইট্রাইড মূলক \({N^{ - - - }}\), এর যোজ্যতা হল \3\)
সালফাইড মূলক \({S^{ - - }}\), এর যোজ্যতা হল \(2\)
ফসফাইড মূলক \({P^{ - - - }}\), এর যোজ্যতা হল \(3\)
অক্সাইড মূলক \({O^{ - - }}\), এর যোজ্যতা হল \(2\)
হাইড্রাইড মূলক \({H^ - }\), এর যোজ্যতা হল \(1\)
ফ্লোরাইড মূলক \({F^ - }\), এর যোজ্যতা হল \(1\)
ব্রোমাইড মূলক \(B{r^ - }\), এর যোজ্যতা হল \(1\)
যৌগমূলক (Radicals):
একাধিক রকমের বিভিন্ন পরমাণু পরষ্পরের সঙ্গে বিশেষ ধরণের জোটবদ্ধ অবস্থায় থেকে যদি সামগ্রিকভাবে একটি অখন্ড পরমাণুর মতো আচরণ করে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, তখন ওইরকম পরমাণুর জোটকে যৌগমূলক বলে। এই মূলক ধনাত্বক, ঋনাত্বক বা প্রশম প্রকৃতিরও হতে পারে।
ধনাত্বক তড়িৎগ্রস্থ যৌগমূলক:
অ্যামোনিয়াম মূলক \(NH_4^ + \), এর যোজ্যতা হল \(1\)
ফসফোনিয়াম মূলক \(PH_4^ + \), এর যোজ্যতা হল \(1\)
ঋনাত্বক তড়িৎগ্রস্থ মূলক:
সালফেট মূলক \(SO_4^ = \), এর যোজ্যতা হল \(2\)
বাইসালফেট মূলক \(HSO_4^ - \), এর যোজ্যতা হল \(1\)
কার্বনেট মূলক \(CO_3^ = \), এর যোজ্যতা হল \(2\)
বাইকার্বনেট মূলক \(HCO_3^ - \), এর যোজ্যতা হল \(1\)
নাইট্রেট মূলক \(NO_3^ - \), এর যোজ্যতা হল \(1\)
নাইট্রাইট মূলক \(NO_2^ - \), এর যোজ্যতা হল \(1\)
সায়ানাইড মূলক \(C{N^ - }\), এর যোজ্যতা হল \(1\)
প্রশম মূলক:
মিথাইল মূলক \(\left( { - C{H_3}} \right)\)
ইথাইল মূলক \(\left( { - {C_2}{H_5}} \right)\)
প্রোপাইল মূলক \(\left( { - {C_3}{H_7}} \right)\)
আণবিক সংকেত লেখার পদ্ধতি (How to write Molecular Formula):
মৌল ও মূলকের চিহ্ন ও যোজ্যতা জানা থাকলে যৌগের সংকেত খুব সহজে প্রকাশ করা যায়। যেমন, একটি মৌল \(M\), এর সঙ্গে অন্য একটি মৌল বা মূলক \(N\) যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করছে। এখন \(M\) মৌলের যোজ্যতা \(x\) এবং \(N\) মৌলের যোজ্যতা \(y\)। তাহলে \(M\) ও \(N\) দ্বারা গঠিত যৌগের সংকেত হবে \({M_y}{N_x}\)। অর্থাৎ \(M\) মৌলের যোজ্যতা যত, সেই সংখ্যাটিকে \(N\) মৌলের ডানপাশে একটু নীচের দিকে লেখা হয় এবং \(N\) মৌলের যোজ্যতা যত, সেই সংখ্যাটিকে \(M\) মৌলের ডানপাশে একটু নীচের দিকে লিখে যৌগটির সংকেতটিকে প্রকাশ করা হয়।
যৌগের সংকেত লেখার নিয়ম:
(1) যৌগটি, দুটি অধাতু নিয়ে গঠিত হলে, যেটি বেশী তড়িৎধনাত্বক, সেটিকে আগে লিখতে হয়। যেমন, \(NO\), \(S{O_2}\), \(PC{l_5}\) ইত্যাদি।
(2) দুটি অধাতুর মধ্যে একটি কঠিন হলে, সেটিকে প্রথমে লিখতে হয়। যেমন: \(C{O_2}\), \(Si{O_2}\) ইত্যাদি।
(3) যৌগটি ধাতু ও অধাতুর দ্বারা গঠিত হলে, প্রথমে ধাতুটিকে তারপর অধাতুটিকে লিখতে হয়। যেমন: \(CaO\), \(N{a_2}S\) ইত্যাদি।
(4) কোনও যৌগ ধনাত্বক মূলক ও অধাতু দিয়ে গঠিত হলে, প্রথমে ধানাত্বক মূলকটিকে তারপর অধাতুটিকে লিখতে হয়। যেমন: \(N{H_4}Cl\)
(5) কোনো যৌগ ধনাত্বক মূলক ও ঋনাত্বক মূলক দ্বারা গঠিত হলে, প্রথমে ধনাত্বক মূলকটিকে ও পরে ঋনাত্বক মূলকটিকে লিখতে হয়। যেমন: \(N{H_4}OH\)
(6) হাইড্রোজেন অধাতু হলেও এটি ধাতুর ন্যায় আচরণ করে তাই, কয়েকটি ক্ষেত্রে আবার নিয়মের ব্যাতিক্রমও দেখা যায়। যেমন: \({H_2}S\)
কয়েকটি মৌলের নাম, চিহ্ন ও যোজ্যতা:
পরিবর্তনশীল যোজ্যতা বিশিষ্ট কয়েকটি মৌলের নাম, চিহ্ন ও তাদের যোজ্যতা:
কয়েকটি মৌল মূলকের নাম, চিহ্ন ও যোজ্যতা:
পরিবর্তনশীল যোজ্যতা বিশিষ্ট কয়েকটি মৌলের নাম, চিহ্ন ও তাদের যোজ্যতা:
কয়েকটি যৌগমূলকের নাম, চিহ্ন ও যোজ্যতা:
নাইট্রোজেনের পাঁচটি যোজ্যতার বিভিন্ন যৌগ:
ফসফরাসের দুটি যোজ্যতার বিভিন্ন যৌগ:
সালফারের তিনটি যোজ্যতার বিভিন্ন যৌগ:
এখন নিম্নের যৌগগুলির সংকেত নিজে নিজে তৈরি করো:
[2column]
[content]
অক্সাইড যৌগ:
সোডিয়াম অক্সাইড/সোডিয়াম মনোক্সাইড
ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড
অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড
ফেরাস অক্সাইড
ফেরিক অক্সাইড
হাইড্রাইড যৌগ:
সোডিয়াম হাইড্রাইড
ক্যালশিয়াম হাইড্রাইড
লিথিয়াম হাইড্রাইড
হাইড্রক্সাইড যৌগ:
সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড
ক্যালশিয়াম হাইড্রক্সাইড
অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রক্সাইড
অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইড
হ্যালাইড যৌগ:
সোডিয়াম ক্লোরাইড
ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড
অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড
ফেরাস ক্লোরাইড
ফেরিক ক্লোরাইড
স্ট্যানাস ক্লোরাইড
স্ট্যানিক ক্লোরাইড
মারকিউরাস ক্লোরাইড
মারকিউরিক ক্লোরাইড
সিলভার ক্লোরাইড
সিলভার ব্রোমাইড
পটাশিয়াম আয়োডাইড
নাইট্রেট/নাইট্রাইট/নাইট্রাইড যৌগ:
সোডিয়াম নাইট্রেট
পটাশিয়াম নাইট্রেট
ক্যালশিয়াম নাইট্রেট
সোডিয়াম নাইট্রাইট
পটাশিয়াম নাইট্রাইট
অ্যালুমিনিয়াম নাইট্রাইড
ম্যাগনেশিয়াম নাইট্রাইড
[/content]
[content]
কার্বনেট/বাইকার্বনেট যৌগ:
সোডিয়াম কার্বনেট
সোডিয়াম বাইকার্বনেট
পটাশিয়াম কার্বনেট
পটাশিয়াম বাইকার্বনেট
ক্যালশিয়াম কার্বনেট
ক্যালশিয়াম বাইকার্বনেট
অ্যামোনিয়াম কার্বনেট
সালফেট/সালফাইট/সালফাইড যৌগ:
সোডিয়াম সালফেট
পটাশিয়াম সালফেট
সোডিয়াম সালফাইট
পটাশিয়াম সালফাইট
লেড সালফাইড
কিউপ্রাস সালফেট
কিউপ্রিক সালফেট
ফেরাস সালফেট
ফেরিক সালফেট
অ্যামোনিয়াম সালফেট
সোডিয়াম সালফাইড
জিঙ্ক সালফাইড
ম্যাগনেশিয়াম সালফাইড
ক্যালশিয়াম সালফাইড
ফসফেট যৌগ:
ফেরিক ফসফেট
ক্যালশিয়াম ফসফেট
সোডিয়াম ফসফেট
অ্যামোনিয়াম ফসফেট
অ্যালুমিনেট/জিঙ্কেট/সিলিকেট যৌগ:
সোডিয়াম অ্যালুমিনেট
পটাশিয়াম অ্যালুমিনেট
সোডিয়াম জিঙ্কেট
সোডিয়াম সিলিকেট
অ্যালুমিনিয়াম সিলিকেট
ক্রোমেট/ডাইক্রোমেট/ক্লোরেট/পারম্যাঙ্গানেট যৌগ:
পটাশিয়াম ক্লোরেট
পটাশিয়াম ডাইক্রোমেট
পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট
সায়ানাইড যৌগ:
পটাশিয়াম সায়ানাইড
পটাশিয়াম ফেরোসায়ানাইড
পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইড
[/content]
[/2column]
Atom & Molecule Part: 1
Atom & Molecule Part: 2
Atom & Molecule Part: 3
Atom & Molecule Part: 4
Atom & Molecule Part: 5
Atom & Molecule Part: 6
যোজ্যতার ধারণা (Concept of Valancy):
যৌগিক পদার্থের অণুর সংকেত লিখতে গেলে প্রথমে যোজ্যতার ধারণা একটু নেওয়া প্রয়োজন। আমরা এর পূর্বে প্রথম \(20\) পারমাণবিক সংখ্যা পর্যন্ত মৌলের যোজ্যতা কীভাবে নির্ণয় করতে হয় দেখেছি। এখানে যোজ্যতা কথাটির অর্থ হল যোজন ক্ষমতা। অর্থাৎ একটি মৌল অপর একটি মৌলের সাথে যুক্ত হওয়ার ক্ষমতাকেই যোজ্যতা বলে। একটা উদাহরণ দিলেই আমরা বুঝতে পারবো।
যেমন, হাইড্রোজেন পরমাণু \(\left( H \right)\) একটি ইলেকট্রন বর্জন করে \({H^ + }\) ক্যাটায়নে পরিণত হয়। অপরদিকে একটি ক্লোরিন পরমাণু \(\left( {Cl} \right)\) একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে \(C{l^ - }\) ঋনাত্বক আয়নে পরিণত হয়। এখানে হাইড্রোজেন পরমাণুটি যে ইলেকট্রন বর্জন করে, ক্লোরিন পরমাণুটি সেই ইলেকট্রনটিকে গ্রহণ করে যথাক্রমে \({H^ + }\) ও \(C{l^ - }\) আয়নে পরিণত হয়ে তারা তড়িৎ আকর্ষণে পরষ্পর যুক্ত হয়ে \(HCl\) অণু গঠন করে। তাই এখানে হাইড্রোজেন ও ক্লোরিন পরমাণুর উভয়েরই যোজ্যতা হল \(1\)।
আবার একটি ক্যালশিয়াম পরমাণু \(\left( {Ca} \right)\) দুটি ইলেকট্রন বর্জন করে \(C{a^{ + + }}\) আয়নে পরিণত হয়। অপরদিকে একটি ক্লোরিন পরমাণু \(\left( {Cl} \right)\) কেবলমাত্র একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারে এবং \(C{l^ - }\) আয়নে পরিণত হয়। তাহলে এখন যদি ক্যালশিয়াম ও ক্লোরিন মিলে যৌগ গঠন করতে চায় তাহলে ক্যালশিয়াম পরমাণু দুটি ইলেকট্রন বর্জন করবে কিন্তু ক্লোরিন কেবলমাত্র একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারে, তাই এক্ষেত্রে দুইটি ক্লোরিন পরমাণুর দরকার হয়। এবং ওই যৌগিক পদার্থটির সংকেতে একটি ক্যালশিয়াম পরমাণু থাকে এবং দুটি ক্লোরিন পরমাণু থাকে, তাই এই যৌগটিকে লিখতে হয় \(CaC{l_2}\)। তাই এখানে ক্যালশিয়াম পরমাণুর যোজ্যতা হল \(2\) এবং ক্লোরিন পরমাণুর যোজ্যতা হয় \(1\)।
আবার কয়েকটি মৌল আছে যাদের যোজ্যতা একাধিক। এদেরকে পরিবর্তনশীল যোজ্যতা যোজ্যতা (Variable Valancy) বিশিষ্ট মৌল বলে। যেমন, ফেরাম বা লোহা, স্ট্যানাম বা টিন, কিউপ্রাম বা কপার, মার্কারী বা পারদ ইত্যাদি। নিম্নে একটি তালিকার মাধ্যমে এদের যোজ্যতাগুলি দেখানো হল। যৌগ গঠনের সময় যখন কম যোজ্যতার মৌলটি ব্যবহৃত হয় তখন তাদের নামের শেষে "আস" এবং যখন বেশী যোজ্যতার মৌলটি যখন লেখা হয তখন নামের শেষে "ইক" কথাটি লেখা হয়।
মূলকের ধারণা (Concept of Radicals):
কখনো কখনো একই মৌলের এক বা একাধিক পরমাণু বা বিভিন্ন মৌলের এক বা একাধিক পরমাণু জোটবদ্ধ অবস্থায় থেকে তড়িৎগ্রস্থ পরমাণু সমষ্টি বা আয়নের মতো আচরণ করে। তখন এদের সাধারণভাবে মূলক (Radicals) বলে। এই মূলকের আধান ধনাত্বক এবং ঋনাত্বক উভয়ই হতে পারে। এবং মূলকগুলির আধানের পরিমাণের দ্বারাই তার যোজ্যতা নির্ধারিত হয়।
যেমন, সালফেট মূলক \(SO_4^ = \), এর যোজ্যতা হল \(2\)
নাইট্রেট মূলক \(NO_3^ - \), এর যোজ্যতা হল \(2\)
কার্বনেট মূলক \(CO_3^ = \), এর যোজ্যতা হল \(2\) ইত্যাদি।
কয়েকটি সংজ্ঞা:
যোজ্যতা (Valancy):
কোনো মৌলের একটি পরমাণু, অপর কোনও এক বা ভিন্ন মৌলের কোনো পরমাণুর সাথে যুক্ত হওয়ার ক্ষমতাকে যোজ্যতা (Valancy) বলে।
সাধারণভাবে, কোনও মৌলের একটি পরমাণু যে কয়টি হাইড্রোজেন পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে বা হাইড্রোজেনঘটিত কোনও যৌগের অণু থেকে যতগুলি হাইড্রোজেন পরমাণু প্রতিস্থাপিত করতে পারে, সেই সংখ্যা দ্বারা ওই পরমাণুর যোজ্যতার পরিমাপ করা হয়। কারণ এক্ষেত্রে হাইড্রোজেনের যোজ্যতা হয় ।
মৌলমূলক (Radicals):
এক বা একাধিক একইরকমের পরমাণু অনেকসময় যৌগমূলকের ন্যায় আচরণ করে, তখন এদেরকে মৌলমূলক বলে।
যেমন:
ক্লোরাইড মূলক \(C{l^ - }\), এর যোজ্যতা হল \(1\)
নাইট্রাইড মূলক \({N^{ - - - }}\), এর যোজ্যতা হল \3\)
সালফাইড মূলক \({S^{ - - }}\), এর যোজ্যতা হল \(2\)
ফসফাইড মূলক \({P^{ - - - }}\), এর যোজ্যতা হল \(3\)
অক্সাইড মূলক \({O^{ - - }}\), এর যোজ্যতা হল \(2\)
হাইড্রাইড মূলক \({H^ - }\), এর যোজ্যতা হল \(1\)
ফ্লোরাইড মূলক \({F^ - }\), এর যোজ্যতা হল \(1\)
ব্রোমাইড মূলক \(B{r^ - }\), এর যোজ্যতা হল \(1\)
যৌগমূলক (Radicals):
একাধিক রকমের বিভিন্ন পরমাণু পরষ্পরের সঙ্গে বিশেষ ধরণের জোটবদ্ধ অবস্থায় থেকে যদি সামগ্রিকভাবে একটি অখন্ড পরমাণুর মতো আচরণ করে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, তখন ওইরকম পরমাণুর জোটকে যৌগমূলক বলে। এই মূলক ধনাত্বক, ঋনাত্বক বা প্রশম প্রকৃতিরও হতে পারে।
ধনাত্বক তড়িৎগ্রস্থ যৌগমূলক:
অ্যামোনিয়াম মূলক \(NH_4^ + \), এর যোজ্যতা হল \(1\)
ফসফোনিয়াম মূলক \(PH_4^ + \), এর যোজ্যতা হল \(1\)
ঋনাত্বক তড়িৎগ্রস্থ মূলক:
সালফেট মূলক \(SO_4^ = \), এর যোজ্যতা হল \(2\)
বাইসালফেট মূলক \(HSO_4^ - \), এর যোজ্যতা হল \(1\)
কার্বনেট মূলক \(CO_3^ = \), এর যোজ্যতা হল \(2\)
বাইকার্বনেট মূলক \(HCO_3^ - \), এর যোজ্যতা হল \(1\)
নাইট্রেট মূলক \(NO_3^ - \), এর যোজ্যতা হল \(1\)
নাইট্রাইট মূলক \(NO_2^ - \), এর যোজ্যতা হল \(1\)
সায়ানাইড মূলক \(C{N^ - }\), এর যোজ্যতা হল \(1\)
প্রশম মূলক:
মিথাইল মূলক \(\left( { - C{H_3}} \right)\)
ইথাইল মূলক \(\left( { - {C_2}{H_5}} \right)\)
প্রোপাইল মূলক \(\left( { - {C_3}{H_7}} \right)\)
আণবিক সংকেত লেখার পদ্ধতি (How to write Molecular Formula):
মৌল ও মূলকের চিহ্ন ও যোজ্যতা জানা থাকলে যৌগের সংকেত খুব সহজে প্রকাশ করা যায়। যেমন, একটি মৌল \(M\), এর সঙ্গে অন্য একটি মৌল বা মূলক \(N\) যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করছে। এখন \(M\) মৌলের যোজ্যতা \(x\) এবং \(N\) মৌলের যোজ্যতা \(y\)। তাহলে \(M\) ও \(N\) দ্বারা গঠিত যৌগের সংকেত হবে \({M_y}{N_x}\)। অর্থাৎ \(M\) মৌলের যোজ্যতা যত, সেই সংখ্যাটিকে \(N\) মৌলের ডানপাশে একটু নীচের দিকে লেখা হয় এবং \(N\) মৌলের যোজ্যতা যত, সেই সংখ্যাটিকে \(M\) মৌলের ডানপাশে একটু নীচের দিকে লিখে যৌগটির সংকেতটিকে প্রকাশ করা হয়।
যৌগের সংকেত লেখার নিয়ম:
(1) যৌগটি, দুটি অধাতু নিয়ে গঠিত হলে, যেটি বেশী তড়িৎধনাত্বক, সেটিকে আগে লিখতে হয়। যেমন, \(NO\), \(S{O_2}\), \(PC{l_5}\) ইত্যাদি।
(2) দুটি অধাতুর মধ্যে একটি কঠিন হলে, সেটিকে প্রথমে লিখতে হয়। যেমন: \(C{O_2}\), \(Si{O_2}\) ইত্যাদি।
(3) যৌগটি ধাতু ও অধাতুর দ্বারা গঠিত হলে, প্রথমে ধাতুটিকে তারপর অধাতুটিকে লিখতে হয়। যেমন: \(CaO\), \(N{a_2}S\) ইত্যাদি।
(4) কোনও যৌগ ধনাত্বক মূলক ও অধাতু দিয়ে গঠিত হলে, প্রথমে ধানাত্বক মূলকটিকে তারপর অধাতুটিকে লিখতে হয়। যেমন: \(N{H_4}Cl\)
(5) কোনো যৌগ ধনাত্বক মূলক ও ঋনাত্বক মূলক দ্বারা গঠিত হলে, প্রথমে ধনাত্বক মূলকটিকে ও পরে ঋনাত্বক মূলকটিকে লিখতে হয়। যেমন: \(N{H_4}OH\)
(6) হাইড্রোজেন অধাতু হলেও এটি ধাতুর ন্যায় আচরণ করে তাই, কয়েকটি ক্ষেত্রে আবার নিয়মের ব্যাতিক্রমও দেখা যায়। যেমন: \({H_2}S\)
কয়েকটি মৌলের নাম, চিহ্ন ও যোজ্যতা:
যোজ্যতা: 1 | যোজ্যতা: 2 | যোজ্যতা: 3 | যোজ্যতা: 4 |
---|---|---|---|
\(H\) | \(O\) | \(B\) | \(C\) |
\(Li\) | \(Mg\) | \(Al\) | \(Si\) |
\(F\) | \(Ca\) | - | - |
\(Na\) | - | - | - |
\(Cl\) | - | - | - |
\(K\) | - | - | - |
\(Ag\) | - | - | - |
পরিবর্তনশীল যোজ্যতা বিশিষ্ট কয়েকটি মৌলের নাম, চিহ্ন ও তাদের যোজ্যতা:
যোজ্যতা: 1 | যোজ্যতা: 2 | যোজ্যতা: 3 | যোজ্যতা: 4 | যোজ্যতা: 5 |
---|---|---|---|---|
\(N\) | \(N\) | \(N\) | \(N\) | \(N\) |
- | \(S\) | - | \(S\) | - |
- | - | \(P\) | - | \(P\) |
- | - | \(As\) | - | \(As\) |
- | \(Fe\) | \(Fe\) | - | - |
- | \(Cr\) | \(Cr\) | - | - |
- | \(Sn\) | - | \(Sn\) | - |
- | \(Pb\) | - | \(Pb\) | - |
\(Hg\) | \(Hg\) | - | - | - |
\(Cu\) | \(Cu\) | - | - | - |
কয়েকটি মৌল মূলকের নাম, চিহ্ন ও যোজ্যতা:
পরিবর্তনশীল যোজ্যতা বিশিষ্ট কয়েকটি মৌলের নাম, চিহ্ন ও তাদের যোজ্যতা:
যোজ্যতা: 1 | যোজ্যতা: 2 | যোজ্যতা: 3 |
---|---|---|
হাইড্রাইড \(H\) | অক্সাইড \(O\) | ফসফাইড \(P\) |
ক্লোরাইড \(Cl\) | সালফাইড \(S\) | নাইট্রাইড \(N\) |
ব্রোমাইড \(Br\) | - | - |
আয়োডাইড \(I\) | - | - |
ফ্লোরাইড \(F\) | - | - |
কয়েকটি যৌগমূলকের নাম, চিহ্ন ও যোজ্যতা:
যোজ্যতা: 1 | যোজ্যতা: 2 | যোজ্যতা: 3 | যোজ্যতা: 4 |
---|---|---|---|
হাইড্রক্সিল \(\left( {OH} \right)\) | জিঙ্কেট \(\left( {Zn{O_2}} \right)\) | ফসফেট \(\left( {P{O_4}} \right)\) | - |
নাইট্রেট \(\left( {N{O_3}} \right)\) | - | ফেরোসায়ানাইড \(Fe{\left( {CN} \right)_6}\) | ফেরিসায়ানাইড \(Fe{\left( {CN} \right)_6}\) |
নাইট্রাইট \(\left( {N{O_2}} \right)\) | - | - | - |
বাইকার্বনেট \(\left( {HC{O_3}} \right)\) | কার্বনেট \(\left( {C{O_3}} \right)\) | - | - |
বাইসালফেট \(\left( {HS{O_4}} \right)\) | সালফেট \(\left( {S{O_4}} \right)\) | - | - |
- | সালফাইট \(\left( {S{O_3}} \right)\) | - | - |
পারম্যাঙ্গানেট \(\left( {Mn{O_4}} \right)\) | সিলিকেট \(\left( {Si{O_3}} \right)\) | - | - |
ক্লোরেট \(\left( {Cl{O_3}} \right)\) | ক্রোমেট \(\left( {Cr{O_4}} \right)\) | - | - |
অ্যালুমিনেট \(\left( {A{l_2}{O_3}} \right)\) | ডাইক্রোমেট \(\left( {C{r_2}{O_7}} \right)\) | - | - |
অ্যামোনিয়াম \(\left( {N{H_4}} \right)\) | - | - | - |
সায়ানাইড \(\left( {CN} \right)\) | - | - | - |
নাইট্রোজেনের পাঁচটি যোজ্যতার বিভিন্ন যৌগ:
যৌগের নাম | সংকেত | যোজ্যতা |
---|---|---|
নাইট্রাস অক্সাইড | \({N_2}O\) | \(1\) |
নাইট্রিক অক্সাইড | \({N_2}{O_2} \to NO\) | \(2\) |
ডাইনাইট্রোজেন ট্রাইঅক্সাইড | \({N_2}{O_3}\) | \(3\) |
নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড | \({N_2}{O_4} \to N{O_2}\) | \(4\) |
নাইট্রোজেন পেন্টঅক্সাইড | \({N_2}{O_5}\) | \(5\) |
ফসফরাসের দুটি যোজ্যতার বিভিন্ন যৌগ:
যৌগের নাম | সংকেত | যোজ্যতা |
---|---|---|
ফসফরাস ট্রাইক্লোরাইড | \(PC{l_3}\) | \(3\) |
ফসফরাস পেন্টাক্লোরাইড | \(PC{l_5}\) | \(5\) |
সালফারের তিনটি যোজ্যতার বিভিন্ন যৌগ:
যৌগের নাম | সংকেত | যোজ্যতা |
---|---|---|
হাইড্রোজেন সালফাইড | \({H_2}S\) | \(2\) |
সালফার ডাইঅক্সাইড | \({S_2}{O_4} \to S{O_2}\) | \(4\) |
সালফার ট্রাইঅক্সাইড | \({S_2}{O_6} \to S{O_3}\) | \(6\) |
এখন নিম্নের যৌগগুলির সংকেত নিজে নিজে তৈরি করো:
[2column]
[content]
অক্সাইড যৌগ:
সোডিয়াম অক্সাইড/সোডিয়াম মনোক্সাইড
ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড
অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড
ফেরাস অক্সাইড
ফেরিক অক্সাইড
হাইড্রাইড যৌগ:
সোডিয়াম হাইড্রাইড
ক্যালশিয়াম হাইড্রাইড
লিথিয়াম হাইড্রাইড
হাইড্রক্সাইড যৌগ:
সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড
ক্যালশিয়াম হাইড্রক্সাইড
অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রক্সাইড
অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইড
হ্যালাইড যৌগ:
সোডিয়াম ক্লোরাইড
ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড
অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড
ফেরাস ক্লোরাইড
ফেরিক ক্লোরাইড
স্ট্যানাস ক্লোরাইড
স্ট্যানিক ক্লোরাইড
মারকিউরাস ক্লোরাইড
মারকিউরিক ক্লোরাইড
সিলভার ক্লোরাইড
সিলভার ব্রোমাইড
পটাশিয়াম আয়োডাইড
নাইট্রেট/নাইট্রাইট/নাইট্রাইড যৌগ:
সোডিয়াম নাইট্রেট
পটাশিয়াম নাইট্রেট
ক্যালশিয়াম নাইট্রেট
সোডিয়াম নাইট্রাইট
পটাশিয়াম নাইট্রাইট
অ্যালুমিনিয়াম নাইট্রাইড
ম্যাগনেশিয়াম নাইট্রাইড
[/content]
[content]
কার্বনেট/বাইকার্বনেট যৌগ:
সোডিয়াম কার্বনেট
সোডিয়াম বাইকার্বনেট
পটাশিয়াম কার্বনেট
পটাশিয়াম বাইকার্বনেট
ক্যালশিয়াম কার্বনেট
ক্যালশিয়াম বাইকার্বনেট
অ্যামোনিয়াম কার্বনেট
সালফেট/সালফাইট/সালফাইড যৌগ:
সোডিয়াম সালফেট
পটাশিয়াম সালফেট
সোডিয়াম সালফাইট
পটাশিয়াম সালফাইট
লেড সালফাইড
কিউপ্রাস সালফেট
কিউপ্রিক সালফেট
ফেরাস সালফেট
ফেরিক সালফেট
অ্যামোনিয়াম সালফেট
সোডিয়াম সালফাইড
জিঙ্ক সালফাইড
ম্যাগনেশিয়াম সালফাইড
ক্যালশিয়াম সালফাইড
ফসফেট যৌগ:
ফেরিক ফসফেট
ক্যালশিয়াম ফসফেট
সোডিয়াম ফসফেট
অ্যামোনিয়াম ফসফেট
অ্যালুমিনেট/জিঙ্কেট/সিলিকেট যৌগ:
সোডিয়াম অ্যালুমিনেট
পটাশিয়াম অ্যালুমিনেট
সোডিয়াম জিঙ্কেট
সোডিয়াম সিলিকেট
অ্যালুমিনিয়াম সিলিকেট
ক্রোমেট/ডাইক্রোমেট/ক্লোরেট/পারম্যাঙ্গানেট যৌগ:
পটাশিয়াম ক্লোরেট
পটাশিয়াম ডাইক্রোমেট
পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট
সায়ানাইড যৌগ:
পটাশিয়াম সায়ানাইড
পটাশিয়াম ফেরোসায়ানাইড
পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইড
[/content]
[/2column]
Atom & Molecule Part: 1
Atom & Molecule Part: 2
Atom & Molecule Part: 3
Atom & Molecule Part: 4
Atom & Molecule Part: 5
Atom & Molecule Part: 6
No comments:
Post a Comment