KNOWLEDGE & WISDOM

WISDOM BLOG offers a Complete Science Guide to Students from Foundation to Advance Level. You Will Get H. C. Verma, I. E. Irodov, D. C Pande Solution, Physics Study Materials, Notes, Suggestion, Mock Test Papers, Free Download PDF Books and Many Science Resource for NTSE, KVPY, Olympaid, IIT, JEE, NEET, WBJEE, Nursing Aspirants and Useful Resource for Competitive Examination Like Rail, Bank, P. Sc, SSC etc.

তৃতীয় অধ্যায়: মৌলিক, যৌগিক ও মিশ্র পদার্থ

মৌলিক, যৌগিক ও মিশ্র পদার্থ, অণু-পরমাণুর ধারণা, চিহ্ন ও সংকেতের ধারণা, মিশ্র পদার্থের পৃথকীকরণ:



পদার্থ: আমাদের পৃথিবীর চারিদিকে নানারকম পদার্থ ছড়িয়ে আছে। চেয়ার, টেবিল, কাঠ, লোহা, পাথর, জল, বিভিন্ন গ্যাস, বই, খাতা ইত্যাদি। এই সমস্ত পদার্থগুলির মধ্যে কতকগুলি কঠিন, কতকগুলি তরল এবং কতকগুলি গ্যাসীয়। তাই বলা যায়, যা কিছুটা স্থান অধিকার করে, যার ওজন আছে এবং যার স্থির বা গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন করতে চাইলে বাধা দেয়,তাকে পদার্থ বলে।

পদার্থের সংজ্ঞা: যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য, যার ভর আছে যা কিছুটা স্থান অধিকার করে থাকে, এবং যার স্থির বা গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে চাইলে বাধা দেয়, তাকে পদার্থ বলে।যেমন: কাচ, কাঠ, লোহা, জল, দুধ, বায়ু, হাইড্রোজেন প্রভৃতি হল এক একটি পদার্থ।

পদার্থের আকার, আয়তন ও অন্যান্য ভৌত অবস্থার পার্থক্য অনুযায়ী পৃথিবীর সমস্ত পদার্থকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
(1) কঠিন পদার্থ
(2) তরল পদার্থ
(3) গ্যাসীয় পদার্থ

কঠিন পদার্থ: সাধারণ অবস্থায় যে সমস্ত পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন থাকে, তাদের কঠিন পদার্থ বলে।
যেমন: সোনা, রূপা, তামা, পাথর, কাঠ, বালি, লবণ ইত্যাদি

কঠিন পদার্থের বৈশিষ্ট্য:
(1) নির্দিষ্ট চাপ ও তাপমাত্রায় কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন থাকে।
(3) কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক আছে।
(4) কঠিন পদার্থ প্রবাহিত হতে পারে না অর্থাৎ এদের প্রবাহী ধর্ম নেই।
(5) কঠিন পদার্থে তাপ প্রয়োগ করলে, পদার্থটি একসময় তরলে পরিণত হয়।
(6) সাধারণ অবস্থায় বাইরে থেকে কোনো শক্তি প্রয়োগ না করলে, কঠিন পদার্থের আকার বা আয়তনের কোনো পরিবর্তন হয় না।
(7) কঠিন পদার্থের প্রচন্ড উপর চাপ প্রয়োগ করলেও কঠিন পদার্থের আয়তন পরিবর্তন প্রায় হয় না।
(8) সাধারণ তাপমাত্রায় কঠিন পদার্থ গ্যাসের মতো ছড়িয়ে পড়ে না অর্থাৎ বাষ্পায়ন হয় না। কিন্তু কর্পূর, ন্যাপথ্যালিন, নিশাদল এরা কঠিন হলেও সাধারণ তাপমাত্রায় বাষ্পে পরিনত হয়। একে ঊর্দ্ধপাতন বলে।
(9) সাধারণ চাপ ও তাপমাত্রায় কতকগুলি কঠিন পদার্থ কেলাসাকার হয় যেমন, বরফ, তুঁতে, সাধারণ লবন, ফটকিরি। আবার কিছু কঠিন পদার্থ অকেলাসাকার হয় যেমন, কাঁচ, চক, পিচ ইত্যাদি

তরল পদার্থ: সাধারণ অবস্থায় যে সমস্ত পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন আছে কিন্তু নির্দিষ্ট কোনও আকার নেই, তাকে তরল পদার্থ বলে।
যেমন: জল, দুধ, অ্যালকোহল ইত্যাদি

তরল পদার্থের বৈশিষ্ট্য
(1) নির্দিষ্ট চাপ ও তাপমাত্রায় তরল পদার্থের একটি নির্দিষ্ট আয়তন আছে কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট আকার নেই। যে পাত্রে তরলকে ঢালা হয়, সেই পাত্রের আকার ধারণ করে।
(2) তরল পদার্থের নির্দিষ্ট হিমাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক আছে।
(3) তরল পদার্থ প্রবাহিত হতে পারে অর্থাৎ এদের প্রবাহী ধর্ম আছে।
(4) তরল পদার্থকে তাপ প্রয়োগ করলে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গ্যাসীয় পদার্থে পরিণত হয়।
(5) তরল পদার্থের উপর প্রচন্ড চাপ প্রয়োগ করলে তরল পদার্থের আয়তন সামান্য কমে।
(6) সাধারন তাপমাত্রায় তরলের উপরিতল থেকে সবসময় বাষ্পায়ন হয়।
(7) তরলের তাপমাত্রা কমাতে থাকলে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ওই তরল কঠিন পদার্থে পরিণত হয়।
(8) কোনো পাত্রে তরল রাখলে স্থির অবস্থায় তরলের উপরিতল সর্বদা অনুভূমিক হয়।

গ্যাসীয় পদার্থ: সাধারণ অবস্থায় যে সমস্ত পদার্থের নির্দিষ্ট কোনও আকার বা আয়তন কোনোটাই থাকে না, তাকে গ্যাসীয় পদার্থ বলে।
যেমন: অক্সিজেন, বায়ু, হাইড্রোজেন, জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাইঅক্সাইড ইত্যাদি

গ্যাসীয় পদার্থের বৈশিষ্ট্য
(1) গ্যাসীয় পদার্থের নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন নেই।
(2) গ্যাসীয় পদার্থের পরিমাণ যতই কম হোক না কেন, যে পাত্রে রাখা হয় সেই পাত্রের আকার ও সমস্ত আয়তন দখল করে।
(3) গ্যাসীয় পদার্থের নির্দিষ্ট কোনো গলনাঙ্ক, হিমাঙ্ক, স্ফুটনাঙ্ক কিছুই নেই
(4) গ্যাসীয় পদার্থ প্রবাহিত হতে পারে অর্থাৎ এদের প্রবাহী ধর্ম আছে।
(5) গ্যাসীয় পদার্থে তাপমাত্রা বাড়ালে এদের অণুগুলির গতিশক্তি বেড়ে যায়।

কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থের পার্থক্য:
কঠিন পদার্থতরল পদার্থগ্যাসীয় পদার্থ
(1) কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন আছে।(1) তরল পদার্থের কোনো নির্দিষ্ট আয়তন আছে কিন্তু নির্দিষ্ট আকার নেই, যে পাত্রে রাখা হয় সেই পাত্রের আকার ধারণ করে।(1) গ্যাসীয় পদার্থের কোনো নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন কোনোটাই নেই, যে পাত্রে রাখা হয় তার আকার ও আয়তন দখল করে।
(2) কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক আছে।(2) তরল পদার্থের নির্দিষ্ট হিমাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক আছে।(2) গ্যাসীয় পদার্থের নির্দিষ্ট কোনো গলনাঙ্ক, হিমাঙ্ক বা স্ফুটনাঙ্ক কিছুই নেই।
(3) কঠিন পদার্থের উপর অনেক চাপ প্রয়োগ করে এর আয়তন প্রায় পরিবর্তন ঘটানো যায় না।(3) তরল পদার্থের উপর অনেক চাপ প্রয়োগ করে এর আয়তন সামান্য পরিবর্তন ঘটানো যায়।(3) গ্যাসীয় পদার্থের উপর অনেক চাপ প্রয়োগ করে এর আয়তন অনেক পরিবর্তন ঘটানো যায়।
(4) কঠিন পদার্থ প্রবাহিত হতে পারে না। তাই কঠিন পদার্থ প্রবাহী নয়।(4) তরল পদার্থ প্রবাহিত হতে পারে। তাই তরল পদার্থ প্রবাহী। (4) গ্যাসীয় পদার্থ প্রবাহিত হতে পারে। তাই গ্যাসীয় পদার্থ প্রবাহী।
যেকোনও পদার্থের মধ্য উপস্থিত উপাদানগুলির প্রকৃতি ওপর নির্ভর করে পদার্থগুলিকে আবার দুইভাগে ভাগ করা হয়।
(1) বিশুদ্ধ পদার্থ
(2) মিশ্র পদার্থ

এই বিশুদ্ধ পদার্থ আবার দুইরকম হতে পারে:
(1) মৌলিক পদার্থ
(2) যৌগিক পদার্থ

এবং মিশ্র পদার্থ আবার দুই ধরণের হতে পারে:
(1) সমসত্ত্ব মিশ্র পদার্থ
(2) অসমসত্ত্ব মিশ্র পদার্থ

বিশুদ্ধ পদার্থ: যে সমস্ত পদার্থ শুধুমাত্র একটি পদার্থেরই দ্বারা গঠিত, অন্য কোনও পদার্থের উপাদান মিশে থাকে না, তাদের বিশুদ্ধ পদার্থ বলে।
যেমন: বিশুদ্ধ জল, লোহা, সোনা, তামা, বিশুদ্ধ নাইট্রোজেন ইত্যাদি

এই বিশুদ্ধ পদার্থ আবার দুই ধরণের হতে পারে।
(1) মৌলিক পদার্থ
(2) যৌগিক পদার্থ

মৌলিক পদার্থ: যে পদার্থকে বিশ্লেষণ করলে ওই পদার্থের উপাদান কণিকা ছাড়া অন্য কোনো পৃথক ধর্মের পদার্থের উপাদান কণিকা পাওয়া যায় না, তাদের মৌলিক পদার্থ বলে।
পৃথিবীতে মৌলিক পদার্থের সংখ্যা 105 টি। এদের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় কতকগুলি পদার্থ কঠিন, কতকগুলি পদার্থ তরল এবং কতকগুলি পদার্থ গ্যাসীয় হয়।
যেমন:
কঠিন মৌলিক পদার্থ: সোনা, রূপা, তামা, দস্তা, গন্ধক, সীসা, কার্বন ইত্যাদি

তরল মৌলিক পদার্থ: পারদ, ব্রোমিন ইত্যাদি

গ্যাসীয় মৌলিক পদার্থ: হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ক্লোরিন, আর্গন ইত্যাদি। সোনা, রূপা, তামা ইত্যাদি

যৌগিক পদার্থ: দুই বা ততোধিক মৌলিক পদার্থের উপাদান কণিকা, নির্দিষ্ট ওজন অণুপাতে পরস্পর রাসায়নিক বিক্রিয়া দ্বারা যুক্ত হয়ে যে ভিন্ন ধর্মের পদার্থ উৎপন্ন করে, তাকে যৌগিক পদার্থ বলে।
যেমন: জল, কার্বন ডাই অক্সাইড, সাধারণ লবণ ইত্যাদি

মিশ্র পদার্থ: দুই বা ততোধিক মৌলিক বা যৌগিক পদার্থকে যেকোনো ওজন অনুপাতে মিশিয়ে যদি এমন পদার্থ পাওয়া যায় যাতে, মিশ্রিত ভিন্ন ভিন্ন পদার্থগুলি তাদের নিজেদের ধর্ম বজায় রাখে, তবে সেই পদার্থকে মিশ্র পদার্থ বলে।
যেমন:
বায়ু: অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন ও জলীয় বাষ্পের মিশ্রন
শরবত: লবন, চিনি ও জলের মিশ্রন।
বারুদ: পটাশিয়াম নাইট্রেট, সালফার ও কাঠকয়লার মিশ্রন।
ধোঁয়া: বায়ু ও কার্বনের সূক্ষ মিশ্রন।
সোডা ওয়াটার: কার্বন ডাইঅক্সাইড ও জলের মিশ্রন।
পিতল: তামা ও জিঙ্কের মিশ্রন।
কাঁসা: তামা ও টিনের মিশ্রন।

মিশ্র পদার্থের বৈশিষ্ট্য:
(1) মিশ্র পদার্থে উপাদান কণাগুলি পাশাপাশি থাকে।
(2) মিশ্র পদার্থে উপাদান কণাগুলির ধর্মের কোনো পরিবর্তন হয় না।
(3) খুব সহজেই মিশ্র পদার্থ থেকে উপাদান কনাগুলিকে আলাদা করা যায়।
(4) যেকোনো ওজন অনুপাতে দুই বা ততোধিক পদার্থ মেশালেই মিশ্র পদার্থ তৈরি হয়।
(5) মিশ্র পদার্থের কোনো নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক বা স্ফটনাঙ্ক থাকে না।
(6) মিশ্রন সাধারণত অসমসত্ত্ব হয় তবে ব্যতিক্রম হল দ্রবণ যেখানে দ্রবণ হল একটি সমসত্ত্ব মিশ্র পদার্থ।

এই মিশ্র পদার্থ আবার দুইধরণের হয়।
(1) সমসত্ত্ব মিশ্র পদার্থ: এই ধরণের মিশ্র পদার্থে, পদার্থের প্রতিটা অংশের ভৌতধর্ম, প্রকৃতি সর্বদা সমান হয়।
যেমন: জলে চিনির দ্রবন, জলে লবনের দ্রবন ইত্যাদি

(2) অসমসত্ত্ব মিশ্র পদার্থ: এই ধরণের মিশ্র পদার্থে, পদার্থের প্রতিটা অংশের ভৌতধর্ম, প্রকৃতি আলাদা আলাদা হয়।
যেমন: জল ও কাদার মিশ্রন, বালি ও লোহাচূরের মিশ্রণ

মৌলিক পদার্থ ও মিশ্র পদার্থের পার্থক্য:

মৌলিক পদার্থমিশ্র পদার্থ
(1) যে পদার্থকে বিশ্লেষণ করলে ওই পদার্থের উপাদান কণিকা ছাড়া অন্য কোনো পৃথক ধর্মের পদার্থের উপাদান কণিকা পাওয়া যায় না, তাদের মৌলিক পদার্থ বলে।(1) দুই বা ততোধিক মৌলিক বা যৌগিক পদার্থকে যেকোনো ওজন অনুপাতে মিশিয়ে যদি এমন পদার্থ পাওয়া যায় যাতে, মিশ্রিত ভিন্ন ভিন্ন পদার্থগুলি তাদের নিজেদের ধর্ম বজায় রাখে, তবে সেই পদার্থকে মিশ্র পদার্থ বলে।
(2) মৌলিক পদার্থ সহজে তৈরি করা যায় না।(2) মিশ্র পদার্থ যে কোনো সহজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তৈরি করা যায়।
(3) মৌলিক পদার্থের নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক আছে।(3) মিশ্র পদার্থের নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক নেই।
(4) মৌলিক পদার্থ একই রকম উপাদান কণিকা দ্বারা গঠিত।(4) মিশ্র পদার্থ বিভিন্ন রকম উপাদান কণিকা দ্বারা গঠিত।

যৌগিক পদার্থ ও মিশ্র পদার্থের পার্থক্য:
যৌগিক পদার্থমিশ্র পদার্থ
(1) দুই বা ততোধিক মৌলিক পদার্থের উপাদান কণিকা, নির্দিষ্ট ওজন অণুপাতে পরস্পর রাসায়নিক বিক্রিয়া দ্বারা যুক্ত হয়ে যে ভিন্ন ধর্মের পদার্থ উৎপন্ন করে, তাকে যৌগিক পদার্থ বলে।(1) দুই বা ততোধিক মৌলিক বা যৌগিক পদার্থকে যেকোনো ওজন অনুপাতে মিশিয়ে যদি এমন পদার্থ পাওয়া যায় যাতে, মিশ্রিত ভিন্ন ভিন্ন পদার্থগুলি তাদের নিজেদের ধর্ম বজায় রাখে, তবে সেই পদার্থকে মিশ্র পদার্থ বলে।
(2) যৌগিক পদার্থে উপাদানগুলি পরষ্পর রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয়ে অন্য পদার্থ উৎপন্ন করে।(2) মিশ্র পদার্থে উপাদানগুলি পাশাপাশি অবস্থান করে।
(2) যৌগিক পদার্থ সর্বদা সমসত্ত্ব হবেই।(2) মিশ্র পদার্থ সমসত্ত্ব বা অসমসত্ত্ব দুইই হতে পারে।
(3) যৌগিক পদার্থে মৌলিক উপাদানগুলি নির্দিষ্ট ওজন অনুপাতে যুক্ত হয়ে গঠিত হয়।(3) মিশ্র পদার্থে মৌলিক উপাদানগুলি যেকোনো ওজন অনুপাতে যুক্ত হয়ে গঠিত হয়।
(4) যৌগিক পদার্থে থাকা উপাদানগুলির রাসায়নিক ধর্মের পরিবর্তন ঘটে নতুন পদার্থে পরিণত হয়।(4) মিশ্র পদার্থে থাকা উপাদানগুলির নিজের নিজের ধর্মের কোনো পরিবর্তন হয় না।
(5) যৌগিক পদার্থ উৎপন্নের সময় তাপের বর্জন বা শোষন হবেই।(5) মিশ্র পদার্থ উৎপন্নের সময় তাপের বর্জন বা শোষন হয় না।
(6) যৌগিক পদার্থের উপাদানগুলিকে খুব সহজ উপায়ে পৃথক করা যায় না।(6) মিশ্র পদার্থের উপাদানগুলিকে খুব সহজ উপায়ে পৃথক করা যায়।

মৌলিক ও যৌগিক পদার্থের পার্থক্য:
মৌলিক পদার্থযৌগিক পদার্থ
(1) যে পদার্থকে বিশ্লেষণ করলে ওই পদার্থের উপাদান কণিকা ছাড়া অন্য কোনো পৃথক ধর্মের পদার্থের উপাদান কণিকা পাওয়া যায় না, তাদের মৌলিক পদার্থ বলে।(1) দুই বা ততোধিক মৌলিক পদার্থের উপাদান কণিকা, নির্দিষ্ট ওজন অণুপাতে পরস্পর রাসায়নিক বিক্রিয়া দ্বারা যুক্ত হয়ে যে ভিন্ন ধর্মের পদার্থ উৎপন্ন করে, তাকে যৌগিক পদার্থ বলে।
(2) মৌলিক পদার্থের পরমাণুগুলির প্রতিটির ভর এবং ধর্ম একই।(2) যৌগিক পদার্থের গঠনকারী পরমাণুগুলির ভর, ধর্ম সব আলাদা হয়।
(3) প্রকৃতিতে মৌলিক পদার্থের সংখ্যা 112 টি, এর মধ্যে 92 টি মৌল প্রাকৃতিক এবং 20 টি মৌলকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে।(3) প্রকৃতিতে যৌগিক পদার্থের সংখ্যা অনেক। বর্তমানে ওই সংখ্যা প্রায় 11 লক্ষেরও বেশী।
(4) মৌলিক পদার্থে, মৌলের অণু একই প্রকার পরমাণু দ্বারা গঠিত।(4) যৌগিক পদার্থে, যৌগের অণু বিভিন্ন প্রকার পরমাণু দ্বারা গঠিত।
(5) মৌলিক পদার্থের বহুরূপতা ধর্ম আছে।(5) যৌগিক পদার্থের বহুরূপতা ধর্ম নেই।
(6) মৌলিক পদার্থকে বিশ্লেষন করলে পৃথক ধর্মের কোনো পদার্থ পাওয়া যায় না।(6) যৌগিক পদার্থকে বিশ্লেষন করলে পৃথক ধর্মের পদার্থ পাওয়া যায়।


বিশুদ্ধ মৌলিক পদার্থ আবার চার ধরণের হয়:
ধাতু: যে মৌল সাধারণ অবস্থায় কঠিন, উজ্জ্বল ও চক্‌চকে, ওজনে ভারী, যাকে আঘাত করলে ধাতব শব্দ উৎপন্ন হয়, যা সাধারণত তাপ ও তড়িতের সুপরিবাহী এবং যা সর্বদা ধনাত্বক তড়িৎধর্মী, তাদের ধাতু বলে।
যেমন: সোডিয়াম, ক্যালশিয়াম, তামা (কপার), লোহা (আয়রণ), অ্যালুমিনিয়াম, রূপা (সিলভার), সোনা (গোল্ড), দস্তা (জিঙ্ক), টিন ইত্যাদি

অধাতু: যে মৌল সাধারণ অবস্থায় তরল বা গ্যাসীয়, উজ্জ্বল বা চক্‌চকে নয়, ওজনে হালকা, গঠনে ভঙ্গুর, যাকে আঘাত করলে শব্দ উৎপন্ন হয় না, যা সাধারণত তাপ ও তড়িতের কুপরিবাহী এবং যা সর্বদা তড়িৎ ঋনাত্বক, তাদের অধাতু বলে।
যেমন: অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ক্লোরিন, সালফার (গন্ধক), কার্বন, ফসফরাস ইত্যাদি

ধাতুকল্প: যে সমস্ত মৌলের মধ্যে ধাতু ও অধাতু উভয়ের ধর্মই আছে, তাদের ধাতুকল্প বলে।
যেমন: আর্সেনিক, অ্যান্টিমনি

নিষ্ক্রিয় মৌল: যে সমস্ত মৌল কোনও রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না, তাদের নিষ্ক্রিয় মৌল বলে।
যেমন: হিলিয়াম, নিয়ন, আর্গন, ক্রিপটন, জেনন, রেডন ইত্যাদি

ধাতু ও অধাতুদের কিছু ব্যতিক্রম:

ধাতুর ব্যাতিক্রম
সাধারণ তাপমাত্রায় তরল ধাতু: পারদ
ওজনে হালকা ধাতু: সোডিয়াম, লিথিয়াম, পটাশিয়াম
হাইড্রোজেনের চেয়েও কম তড়িৎধনাত্বক ধাতু: তামা, সোনা, রূপা

অধাতুর ব্যাতিক্রম
সাধারণ তাপমাত্রায় তরল অধাতু: ব্রোমিন
সাধারণ তাপমাত্রায় কঠিন ও উজ্জ্বল অধাতু: আয়োডিন, হীরক
তড়িৎ ধনাত্বক অধাতু: হাইড্রোজেন
তড়িৎ পরিবহন করে এমন অধাতু: গ্রাফাইট, গ্যাসকার্বন
গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক বেশি এমন অধাতু: কার্বন, বোরন, সিলিকন
ওজনে ভারী এমন অধাতু: আয়োডিন

ধাতু ও অধাতুর পার্থক্য
ধাতুঅধাতু
(1) ধাতু সাধারণ অবস্থায় কঠিন, উজ্জ্বল, চক্‌চকে, তবে ব্যাতিক্রম হিসাবে পারদ ধাতু হলেও তরল।(1) অধাতু সাধারণ অবস্থায় তরল বা গ্যাসীয় হয় এবং অনুজ্জ্বল, তবে ব্যাতিক্রম হিসাবে আয়োডিন অধাতু হলেও কঠিন।
(2) ধাতু প্রসারণশীল এবং ওজনে ভারী ও আঘাত করলে ধাতব শব্দ উৎপন্ন হয়।(2) অধাতু প্রসারণশীল নয়, হালকা এবং আঘাত করতে শব্দ উৎপন্ন হয় না।
(3) ধাতু সাধারণত ধনাত্বক তড়িৎধর্মী।(3) অধাতু সাধারণত ঋনাত্বক তড়িৎধর্মী, তবে ব্যাতিক্রম হিসাবে হাইড্রোজেন অধাতু হলেও তড়িৎধনাত্বক।
(4) ধাতুর গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক সাধারণত কম হয়।(4) অধাতুর গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক সাধারণত কম হয়।
(5) ধাতুগুলি তাপ ও তড়িতের সুপরিবাহী।(5) অধাতুগুলি তাপ ও তড়িতের কুপরিবাহী, তবে ব্যাতিক্রম হিসাবে গ্রাফাইট, গ্যাসকার্বন অধাতু হলেও তড়িৎ পরিবহন করে।
(6) ধাতুগুলি অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে ক্ষারীয় অক্সাইড গঠন করে।(6) অধাতুগুলি অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে আম্লিক অক্সাইড গঠন করে।
পরমাণুর ধারণা (Concept of Atom):
যেকোনো মৌলের শেষ উৎস জানতে পরমাণুর ধারণা প্রথম কল্পনা করা হয় প্রায় খ্রীষ্টজন্মের কয়েক শতাব্দী আগে। এই ব্যাপারে ভারতীয় দার্শনিক ঋষি কণাদকে পরমাণুর ধারণার পথিকৃৎ হিসাবে মনে করা হয়। তাঁর মতে পরমাণু হল সদ্‌ (অস্থিত্ব আছে এমন কিছু), নিত্য (চিরন্তন, অক্ষয় ও অখন্ডনীয়), এর উৎস বা কারণ নেই। এই বিরাট বিশ্বসংস্থিতির মধ্যে কণামাত্র স্থানে তার অবস্থান। অতি সূক্ষ, চোখে দেখা যায় না অথচ সমস্ত কিছু সৃষ্টির মূলে এই পরমাণু। ঋষি কণাদের এই ধারণাতে প্রথমে অবাক হয়েছিলেন ডেমোক্রিটাস, লিউপ্পাস বিভিন্ন গ্রীক দার্শনিকগণ। পরে তাঁরা মেনে নেন পরমাণু আছে যার নামকরণ করেছিলেন পরমাণু যার অর্থ Atomos, অর্থাৎ যাকে আর ভাঙা যায় না। এর পরে বেশ শতাব্দী কেটে গেলেও পরমাণু সম্পর্কে আর কেউ কোনো ধারণা দেন নি। অবশেষে 1808 সালে ইংরেজ বিজ্ঞানী জন ডালটন পরমাণু সম্পর্কে একটি ধারণা দেন। ডালটনের পরমাণুবাদই প্রথম পরমাণুকে দার্শনিক চিন্তাধারা থেকে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারায় নিয়ে আসে।

পরমাণুর সংজ্ঞা:
কোনো মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম অবিভাজ্য কণা যা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, তাকে পরমাণু বলে। পরমাণুতে কোনো মৌলিক পদার্থের সব ধর্ম বজায় থাকে এবং পরমাণুর স্বাধীনভাবে অস্থিত্ব থাকতে পারে আবার নাও পারে।

তবে বর্তমানে পরমাণু আর অবিভাজ্য নয়। আবিষ্কৃত হয়েছে যেকোনো পরমাণু আবার ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন নামক তিনটি কনা দিয়ে গঠিত। আর পরমাণু রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না। অংশগ্রহণ করে পরমাণুর মধ্যে থাকা ইলেকট্রন কণাগুলি। এগুলি উচ্চতর শ্রেণিতে বিশদে জানা হবে।

পরমাণুকে প্রকাশ করার নিয়ম:

প্রাচীনকালের বিজ্ঞানীরা সেইসময় যতগুলি পরমাণুর সন্ধান পেয়েছিলেন সেগুলিকে কতকগুলি জটিল চিত্র বা ছবির মাধ্যমে প্রথমে প্রকাশ করা শুরু করেছিলেন। কিন্তু তখন পর্যন্ত আবিষ্কার হওয়া 92 টি মৌলকে এই প্রনালীতে প্রকাশ করা, লেখা বা মনে রাখাও কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তখন বিজ্ঞানী বার্জিলিয়াস এই মৌলগুলির পরমাণুগুলিকে সহজভাবে সহজ প্রনালীতে প্রকাশ করার চিন্তাধারা দেন যা আজও আমাদের কাছে গ্রহনযোগ্য, তা হল পরমাণুগুলির চিহ্ন (Symbol)

চিহ্নের সংজ্ঞা:
মৌলিক পদার্থের নাম যার দ্বারা সংক্ষেপে প্রকাশ করা হয়, তাকে চিহ্ন বলে। অর্থাৎ মৌলিক পদার্থের পরমাণুকে সংক্ষেপে প্রকাশ করাকেই চিহ্ন বলে।

চিহ্ন লেখার নিয়ম:
(1) মৌলিক পদার্থের ইংরাজী নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে পরমাণুগুলিকে প্রকাশ করা হয়। যেমন,
বোরন (Boron): B
কার্বন (Carbon): C
নাইট্রোজেন (Nitrogen): N
হাইড্রোজেন (Hydrogen): H
অক্সিজেন (Oxygen): O
সালফার (Sulphur): S

(2) একই প্রথম অক্ষর বিশিষ্ট বিভিন্ন মৌল থাকলে, তখন ওই প্রথম অক্ষরটির সঙ্গে পরের অক্ষরটি বা প্রথম অক্ষরের সঙ্গে জোরে উচ্চারিত অক্সরটি যোগ করে প্রকাশ করতে হয়। যেমন,
ক্যালশিয়াম (Calcium): Ca
ব্রোমিন (Bromine): Br
বিসমাথ (Bismuth): Bi
বেরিয়াম (Barium): Ba
বেরিলিয়াম (Berilium): Be
ক্যাডমিয়াম (Cadmium): Cd
সিজিয়াম (Cesium): Cs
ক্লোরিন (Chlorine): Cl
ক্রোমিয়াম (Chromium): Cr

(3) কিছু মৌলের পরমাণুর নাম ল্যাটিন ভাষা অনুসারে প্রথম একটি অক্ষর বা পরপর দুটি অক্ষর বা প্রথম অক্ষরের সাথে জোরে উচ্চারিত অক্ষরদুটি মিলিয়ে চিহ্ন লেখা হয়। যেমন,
সোডিয়াম (Natrium): Na
পটাশিয়াম (Kalium): K
আয়রণ বা লোহা (Ferrum): Fe
লেড বা সীসা (Plumbum): Pb
টিন (Stannum): Sn
সিলভার বা রূপা (Argentum): Ag
গোল্ড বা সোনা (Aurum): Au
কপার বা তামা (Cuprum): Cu
মার্কারী বা পারদ (Hydragyrum): Hg

(4) চিহ্ন লিখতে গেলে সবসময় বড় হাতের অক্ষরে (Capital Letter) লিখতে হয়। আর যদি দুটি অক্ষরের হয় তখন প্রথমটি বড় হাতের (Capital Letter), পরেরটি ছোটো হাতের (Small Letter) করে লিখতে হয়। যেমন,
মৌলের নামসঠিক চিহ্নভূল চিহ্ন
কার্বনCc
নাইট্রোজেনNn
সোডিয়ামNaSo
সোডিয়ামNaNA
সোডিয়ামNana
ক্লোরিনClCL

কয়েকটি মৌলিক পদার্থের চিহ্ন:
হাইড্রোজেন: H
হিলিয়াম: He
লিথিয়াম: Li
বেরিলিয়াম: Be
বোরন: B
কার্বন: C
নাইট্রোজেন: N
অক্সিজেন: O
ফ্লোরিন: F
নিয়ন: Ne
সোডিয়াম: Na
ম্যাগনেশিয়াম: Mg
অ্যালুমিনিয়াম: Al
সিলিকন: Si
ফসফরাস: P
সালফার: S
ক্লোরিন: Cl
আর্গন: Ar
পটাশিয়াম: K
ক্যালশিয়াম: Ca
ক্রোমিয়াম: Cr
ম্যাঙ্গানিজ: Mn
আয়রণ: Fe
কোবাল্ট: Co
নিকেল: Ni
কপার: Cu
জিঙ্ক: Zn
আর্সেনিক: As
ব্রোমিন: Br
ক্রিপটন: Kr
সিলভার: Ag
ক্যাডমিয়াম: Cd
টিন: Sn
আয়োডিন: I
প্ল্যাটিনাম: Pt
সোনা: Au
পারদ: Hg
সীসা: Pb
ইউরেনিয়াম: U

আগেই বলা হয়েছে মৌলিক পদার্থের পরমাণুর স্বাধীন অস্থিত্ব থাকতে পারে আবার নাও পারে। যেমন, আয়রণ, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি কিছু কিছু মৌলের পরমাণু আছে যাদের একদম স্বাধীন অস্থিত্ব আছে। কিন্তু হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন এইরকম অসংখ্য মৌল আছে যাদের পরমাণুর কোনো স্বাধীন সত্ত্বা বা অস্থিত্ব নেই। এদের কি হয়?
এরা সবসময় দুই বা ততোধিক পরমাণু একসাথে জোড় বেঁধে স্বাধীনভাবে অবস্থান করে। যেমন,
(1) হাইড্রোজেনের দুটি পরমাণু একসাথে জোড় বেঁধে একটি যৌগিক পরমাণু তৈরি করে।
(2) অক্সিজেনের দুটি পরমাণু একসাথে জোড় বেঁধে একটি যৌগিক পরমাণু তৈরি করে।
(3) নাইট্রোজেন, ক্লোরিন, ব্রোমিন এদের সবারই দুটি পরমাণু একসাথে জোড় বেঁধে একটি যৌগিক পরমাণু তৈরি করে।
(4) ফসফরাসের চারটি পরমাণু একসাথে জোড় বেঁধে একটি যৌগিক পরমাণু তৈরি করে।
(5) সালফারের আটটি পরমাণু একসাথে জোড় বেঁধে একটি যৌগিক পরমাণু তৈরি করে।
আবার সবসময় যে একই ধরণের পরমাণুগুলি জোড় বাঁধে তা কিন্তু নয়। যেমন,
(6) হাইড্রোজেনের দুটি পরমাণু এবং অক্সিজেনের একটি পরমাণু, মোট তিনটি পরমাণু মিলে একটি জলের যৌগিক পরমাণু গঠন করে।
এদের কিন্তু স্বাধীন সত্ত্বা বা স্বাধীন অস্থিত্ব থাকে। তখন এদের আর শুধু পরমাণু বা পরমাণু সমষ্টি না যৌগিক পরমাণু বলা হয় না। তখন এদের নাম হয় অণু (Molecule)। এই অণুর সবসময় স্বাধীন সত্ত্বা থাকে। এই অণু সম্পর্কে সর্বপ্রথম ধারণা দেন বিজ্ঞানী অ্যামোদিও অ্যাভোগাড্রো। তাই অনুর সংজ্ঞায় বলা যায়,

অণু (Molecule) মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম যে কণা স্বাধীনভাবে থাকতে পারে এবং যার মধ্যে পদার্থটির সমস্ত ধর্ম বজায় থাকে, তাকে অণু বলে। যেমন, (1) একটি অক্সিজেন অণু, দুটি অক্সিজেন পরমাণু (O) নিয়ে গঠিত। তাই অক্সিজেন অণুকে লেখা হয় \({O_2}\) (2) একটি জলের অণু, দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু (H) এবং একটি অক্সিজেন পরমাণু (O) নিয়ে গঠিত হয়, তাই একটি জলের অণুকে লেখা হয় \({H_2}O\)
(3) একটি অ্যামোনিয়ার অণু তিনটি হাইড্রোজেন পরমাণু (H) এবং একটি নাইট্রোজেন পরমাণু (N) নিয়ে গঠিত হয়, তাই একটি অ্যামোনিয়ার অণুকে লেখা হয় \(N{H_3}\)

মৌলিক অণু:
কোনো অণু একই প্রকার পরমাণু দিয়ে গঠিত হলে তাকে বলা হয় মৌলিক অণু।
যেমন,
(1) একটি নাইট্রোজেন অণু, দুটি নাইট্রোজেন পরমাণু (N) দ্বারা গঠিত, তাই একটি নাইট্রোজেন অণুকে লেখা হয় \({N_2}\)
(2) একটি হাইড্রোজেন অণু, দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু (H) দ্বারা গঠিত, তাই একটি হাইড্রোজেন অণুকে লেখা হয় \({H_2}\)
(3) একটি ক্লোরিন অণু, দুটি ক্লোরিন পরমাণু (Cl) দ্বারা গঠিত, তাই একটি ক্লোরিন অণুকে লেখা হয় \(C{l_2}\)
(4) একটি ওজোন অণু তিনটি অক্সিজেন পরমাণু (O) দ্বারা গঠিত, তাই একটি ওজোন অণুকে লেখা হয় \({O_3}\)
(5) একটি অক্সিজেন অণু, দুটি অক্সিজেন পরমাণু (O) দ্বারা গঠিত, তাই একটি অক্সিজেন অণুকে লেখা হয় \({O_2}\)
(6) একটি সালফারের অণু, আটটি সালফার পরমাণু (S) দ্বারা গঠিত, তাই একটি সালফার অণুকে লেখা হয় \({S_8}\)

এই অণুগুলি একই ধরণের পরমাণু দিয়ে গঠিত হওয়ায় এরা সবাই মৌলিক অণু। নীচে আরও কয়েকটি মৌলিক অণুর নাম নীচে দেওয়া হল।
\({H_2}\), \({O_2}\), \({N_2}\), \(C{l_2}\), \({O_3}\), \(B{r_2}\), \({I_2}\), \({P_4}\), \({S_8}\) ইত্যাদি সবই হল মৌলিক অণু।

যৌগিক অণু
যে সমস্ত অণু বিভিন্ন প্রকার অণু দ্বারা গঠিত, তাদের যৌগিক অণু বলে।
যেমন,
() একটি জলের অণু, দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু () ও একটি অক্সিজেন পরমাণু () দ্বারা গঠিত। তাই জলের অণুকে লেখা হয় \({H_2}O\)
() একটি কার্বন ডাইঅক্সাইডের অণু, একটি কার্বন পরমাণু () ও দুটি অক্সিজেন পরমাণু () নিয়ে গঠিত হয়। তাই একটি কার্বন ডাইঅক্সাইডের অণুকে লেখা হয় \(C{O_2}\)
() একটি অ্যামোনিয়া গ্যাসের অণু, তিনটি হাইড্রোজেন পরমাণু () ও একটি নাইট্রোজেন পরমাণু () নিয়ে গঠিত হয়। তাই একটি অ্যামোনিয়ার অণুকে লেখা হয় \(N{H_3}\)
() একটি সালফিউরিক অ্যাসিডের অণু, দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু (), একটি সালফার পরমাণু () এবং চারটি অক্সিজেন পরমাণু () নিয়ে গঠিত হয়। তাই একটি সালফিউরিক অ্যাসিডের অণুকে লেখা হয় \({H_2}S{O_4}\)
এই অণুগুলি বিভিন্ন প্রকার পরমাণু দিয়ে গঠিত হওয়ায় এরা সবাই যৌগিক অণু। এখানে আরও কয়েকটি যৌগিক অণুর নাম নীচে দেওয়া হল।
\({H_2}O\), \(C{O_2}\), \(N{H_3}\), \({H_2}S\), \(S{O_2}\), \({H_2}S{O_4}\), \(HN{O_3}\), \(HCl\), \(NaOH\), \(PC{l_3}\), \(PC{l_5}\) ইত্যাদি সবই হল যৌগিক অণু।

পারমানবিকতা (Atomicity):
কোনো মৌলিক পদার্থের একটি অণু, যতগুলি পরমাণু দিয়ে গঠিত হয়, সেই সংখ্যাকে ওই মৌলের পারমানবিকতা বলে।
যেমন,
পারমানবিকতাউদাহরণ
পারমানবিকতা:1
সোডিয়াম (Na), পটাশিয়াম (K), ক্যালশিয়াম (Ca), হিলিয়াম (He), নিয়ন (Ne), আর্গন (Ar) ইত্যাদি মৌলের অণু কেবলমাত্র একটি পরমাণু দ্বারাই গঠিত হয়। তাই এদের পারমাণবিকতা 1। এবং তাই এদের অণু ও পরমাণু সমার্থক।
পারমাণবিকতা 2
হাইড্রোজেন (\({H_2}\)), অক্সিজেন (\({O_2}\)), নাইট্রোজেন (\({N_2}\)), ক্লোরিন (\(C{l_2}\)), ব্রোমিন (\(B{r_2}\)) ইত্যাদি মৌলের অণু দুটি করে পরমাণু দ্বারা গঠিত হয় তাই এদের পারমানবিকতা হল 2। এদের দ্বিপারমানবিক বলে।
পারমানবিকতা 3
ওজোন অণু (\({O_3}\)), তিনটি অক্সিজেন পরমাণু দ্বারা গঠিত। তাই ওজোনের পারমাণবিকতা হল 3
পারমানবিকতা 4
একটি ফসফরাস অণু (\({P_4}\)), চারটি ফসফরাসের পরমাণু দ্বারা গঠিত। তাই ফসফরাসের পারমানবিকতা হল 4।
পারমানবিকতা 8
সালফারের অণু (\({S_8}\)), আটটি সালফারের পরমাণু দিয়ে গঠিত, তাই সালফারের পারমানবিকতা হল 8।

অণুকে লেখার পদ্ধতি বা অণুকে লেখার নিয়ম
কোনো মৌলিক পদার্থের পরমাণুকে প্রকাশ করার জন্য যেমন কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়, তেমনি কোনো মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের অণুকেও সংক্ষেপে প্রকাশ করার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। আমরা আগেই দেখেছি এখানে মৌলিক পদার্থের অণুকে সংক্ষেপে প্রকাশ করার নিয়ম খুব সহজ। ওই মৌলিক অণুটি, কতকগুলি পরমাণু দ্বারা গঠিত তা পরমাণুটির চিহ্ন প্রথমে লিখে তারপর Subscript হিসাবে পরমাণুর সংখ্যাটিকে লিখতে হয়। অর্থাৎ পরমাণুটির চিহ্নের পাশে ডানদিকে একটু নীচে করে পরমাণুর সংখ্যাটিকে বসাতে হয়। যেমন, \({H_2}\), \({N_2}\), \({P_4}\) ইত্যাদি। তখন এদের বলা হয় মৌলিক পদার্থের সংকেত। তখন আর এদের চিহ্ন বলা হয় না।
সংকেত কাকে বলে?
মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের অণুকে চিহ্নের সাহায্যে সংক্ষেপে প্রকাশ করার পদ্ধতিতে সংকেত বলে।
যেমন, জলের সংকেত \({H_2}O\)
কিন্তু যৌগিক পদার্থের অণুগুলির সংকেত (Formula) লেখার ক্ষেত্রে বেশকিছু জটিল নিয়ম মানতে হয়।

যোজ্যতার ধারণা:
যৌগিক পদার্থের অণুর সংকেত লিখতে গেলে যোজ্যতার ধারণা একটু নেওয়া প্রয়োজন। যোজ্যতা কথার অর্থ হল যোজন ক্ষমতা। অর্থাৎ একটি মৌল অপর একটি মৌলের সাথে যুক্ত হওয়ার ক্ষমতাকেই যোজ্যতা বলে। যেমন, একটি হাইড্রোজেন পরমাণু (H), একটি ক্লোরিন পরমাণুর (Cl) সঙ্গে যুক্ত হয়ে \(HCl\) অণু গঠন করে। তাই এখানে হাইড্রোজেন ও ক্লোরিন পরমাণুর উভয়ের যোজ্যতা হল 1। আবার একটি ক্যালশিয়াম পরমাণু (Ca) দুটি ক্লোরিন পরমাণুর (Cl) সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি ক্যালশিয়াম ক্লোরাইড (\(CaC{l_2}\)) অণু গঠন করে। তাই এখানে ক্যালশিয়াম পরমাণুর যোজ্যতা হল 2 এবং ক্লোরিন পরমাণুর যোজ্যতা হল 1।
আবার কয়েকটি মৌল আছে যাদের একাধিক যোজ্যতা দেখা যায়। এদের পরিবর্তনশীল যোজ্যতা বিশিষ্ট মৌল বলে। যেমন, লোহা (Fe), টিন (Sn), কপার (Cu), পারদ (Hg) এদের একাধিক যোজ্যতা থাকে। যৌগ গঠনের সময় যখন কম যোজ্যতার মৌলটি লেখা হয় হয় তখন এদের নামের শেষে "আস" এবং যখন বেশী যোজ্যতার মৌলটি লেখা হয় তখন তাদের নামের পাশে "ইক" কথাটি লিখতে হয়।

যোজ্যতার সংজ্ঞা:
কোনো মৌলের একটি পরমাণু অন্য একটি পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ক্ষমতাকে যোজ্যতা বলে। সাধারণভাবে, কোনো মৌলের একটি পরমাণু যে কয়টি হাইড্রোজেন (H) পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে বা হাইড্রোজেন ঘটিত কোনো যৌগের অণু থেকে যতগুলি হাইড্রোজেন পরমাণু (H) প্রতিস্থাপিত করতে পারে, সেই সংখ্যা দ্বারা ওই পরমাণুর যোজ্যতার পরিমাপ করা হয়। কারণ হাইড্রোজেনের যোজ্যতা হল 1।

মৌলিক পদার্থের অণুর সংকেত লেখার নিয়ম:
(1) একটি মৌলিক পদার্থের অণু যতগুলি পরমাণু নিয়ে গঠিত হয়, সেই সংখ্যাটিকে মৌলটির চিহ্নের ডানদিকে একটু নীচের দিকে লিখে ওই অণুর সংকেত প্রকাশ করা হয়।
যেমন, একটি হাইড্রোজেন অণুর সংকেত \({H_2}\), একটি ফসফরাস অণুর সংকেত \({P_4}\) ইত্যাদি
(2) নিষ্ক্রিয় গ্যাস এবং ধাতুগুলির অণু কেবলমাত্র একটি পরমাণু দ্বারা গঠিত। তাই এদের শুধুমাত্র চিহ্ন দিয়েই এদের সংকেত প্রকাশ করা হয়।
যেমন, হিলিয়াম গ্যাসের সংকেত \(He\), সোডিয়াম অণুর সংকেত \(Na\) ইত্যাদি

যৌগিক পদার্থের অণুর সংকেত লেখার নিয়ম:
যৌগিক পদার্থের অণুর ক্ষেত্রে উপাদান মৌলগুলির চিহ্ন পাশাপাশি লিখে প্রতিটি চিহ্নের ডানদিকে একটু নীচের দিকে প্রতিটি মৌলের পরমাণুর সংখ্যা লিখে তার সংকেত প্রকাশ করা হয়।
মৌল বা মূলকটির যোজ্যতা জানা থাকলে খুব সহজে ওই যৌগের মধ্যে প্রতিটি মৌলের পরমাণুর সংখ্যা নির্নয় করে ওই যৌগের সংকেত খুব সহজে প্রকাশ করা যায়। যেমন, একটি মৌল M এর সঙ্গে অন্য একটি মৌল বা মূলক N যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে। এখন M মৌলের যোজ্যতা x এবং N মৌলের যোজ্যতা y। তাহলে M ও N দ্বারা গঠিত যৌগের সংকেত হবে \({M_y}{N_x}\)। অর্থাৎ M মৌলের যোজ্যতা যত, সেই সংখ্যাটিকে N এর ডানদিকে নীচের দিকে এবং N মৌলের যোজ্যতা যত, সেই সংখ্যাটিকে M মৌলের ডানদিক নীচের দিকে লিখে যৌগটির সংকেত প্রকাশ করা হয়।

যৌগের সংকেত লেখার নিয়ম:
(1) দুটি অধাতু দ্বারা যৌগটি গঠিত হলে, যেটি বেশী তড়িৎঋনাত্বক, সেটিকে পরে লিখতে হয়। যেমন, \(NO\), \(S{O_2}\), \(PC{l_5}\) ইত্যাদি
(2) দুটি অধাতুর মধ্যে একটি কঠিন হলে সেটিকে প্রথমে লিখতে হয়। যেমন, \(C{O_2}\), \(Si{O_2}\) ইত্যাদি
(3) ধাতু ও অধাতু দ্বারা যৌগটি গঠিত হলে, প্রথমে ধাতুটিকে তারপরে অধাতুটিকে লিখতে হয়। যেমন, \(NaCl\), \(CaO\) ইত্যাদি
(4) ধনাত্বক মূলক ও অধাতু দ্বারা গঠিত হলে প্রথমে ধনাত্বক মূলক ও পরে অধাতুটিকে লিখতে হয়। যেমন, \(N{H_4}Cl\)
(5) ধনাত্বক মূলক ও ঋনাত্বক মূলক দ্বারা যৌগটি গঠিত হলে প্রথমে ধনাত্বক মূলক ও পরে ঋনাত্বক মূলকটিকে লিখতে হয়। যেমন, \(N{H_4}OH\)
(6) হাইড্রোজেন অধাতু হলেই হাইড্রোজেন ধাতুর মতো আচরন করে। তাই কয়েকটি ক্ষেত্রে আবার নিয়মের ব্যতিক্রম দেখা যায়। যেমন, \({H_2}S\)

সংকেত থেকে কি কি জানা যায়?
(1) সংকরতের সাহায্যে মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের নাম সংক্ষেপে প্রকাশ করা হয়। যেমন, \({O_2}\) দ্বারা একটি অক্সিজেন অণুকে বোঝায়। \(C{O_2}\) দ্বারা একটি কার্বন ডাইঅক্সাইডের অণুকে বোঝায়।
(2) সংকেতের সাহায্যে কোনো মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের মধ্যে কোন্‌ কোন্‌ পরমাণু, কতগুলি করে থাকে সেটা জানা যায়। যেমন, \(C{O_2}\) দ্বারা জানা যায় যে একটি কার্বন ডাইঅক্সাইডের অণু একটি কার্বন পরমাণু (C) ও দুটি অক্সিজেন পরমাণু (O) নিয়ে গঠিত হয়।

নীচের যৌগগুলিতে কোন্! কোন্‌ পরমাণু কয়টি করে আছে?
কার্বন ডাইঅক্সাইড: \(C{O_2}\): একটি কার্বন পরমাণু (C) ও দুটি অক্সিজেন পরমাণু (O)
কার্বন মনোক্সাইড: \(CO\): একটি কার্বন পরমাণু (C) ও একটি অক্সিজেন পরমাণু (O)
মিথেন: \(C{H_4}\): একটি কার্বন পরমাণু (C) ও চারটি হাইড্রোজেন পরমাণু (H)
অ্যামোনিয়া: \(N{H_3}\): একটি নাইট্রোজেন পরমাণু (N) এবং তিনটি হাইড্রোজেন পরমাণু (H)
হাইড্রোজেন সালফাইড: \({H_2}S\): দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু (H) এবং একটি সালফার পরমাণু (S)
সালফার ডাইঅক্সাইড: \(S{O_2}\): একটি সালফার পরমাণু (S) এবং দুটি অক্সিজেন পরমাণু (O)
হাইড্রোজেন ক্লোরাইড: \(HCl\): একটি হাইড্রোজেন পরমাণু (H) এবং একটি ক্লোরিন পরমাণু (Cl)

যৌগের নামকরণে একটি বিশেষ পদ্ধতি:
কোনো যৌগ দুই রকম পরমাণু নিয়ে গঠিত হলে, যদি কোনো একটি পরমাণুর সংখ্যা
1 হয় তাহলে ডাকা হয়: মনো
2 হয় তাহলে ডাকা হয়: ডাই
3 হয় তাহলে ডাকা হয়: ট্রাই
4 হয় তাহলে ডাকা হয়: টেট্রা
5 হয় তাহলে ডাকা হয়: পেন্টা
6 হয় তাহলে ডাকা হয়: হেক্সা .... ইত্যাদি

এই নিয়মে গঠিত কয়েকটি যৌগ হল:কার্বন ডাইঅক্সাইড: \(C{O_2}\): কারণ দুটি অক্সিজেন পরমাণু আছে।
কার্বন মনোঅক্সাইড: \(CO\): কারণ একটি অক্সিজেন পরমাণু আছে।
কার্বন টেট্রাক্লোরাইড: \(CC{l_4}\): কারণ চারটি ক্লোরিন পরমাণু আছে।
সালফার ডাইঅক্সাইড: \(S{O_2}\): কারণ দুটি অক্সিজেন পরমাণু আছে।
সালফার ট্রাইঅক্সাইড: \(S{O_3}\): কারণ এতে তিনটি অক্সিজেন পরমাণু আছে।
ফসফরাস ট্রাইক্লোরাইড: \(PC{l_3}\): কারণ এতে তিনটি ক্লোরিন পরমাণু আছে।
ফসফরাস পেন্টাক্লোরাইড: \(PC{l_5}\): কারণ এতে পাঁচটি ক্লোরিন পরমাণু আছে।
ফসফরাস ট্রাইফ্লোরাইড: \(P{F_3}\): কারণ এতে তিনটি ফ্লোরিন পরমাণু আছে।

No comments:

Post a Comment